স্বর্ণের বাজার: উত্থান-পতনে যেমন গেল ২০২৪
ভয়েস প্রতিদিন ডেস্ক
আপলোড সময় :
০৬-১২-২০২৪ ০৮:৪০:০৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৬-১২-২০২৪ ০৮:৪০:০৫ অপরাহ্ন
ছবি:সংগৃহীত
চলতি বছরের শুরু থেকেই উত্থান-পতনে টালমাটাল দেশের স্বর্ণের বাজার। কখনও টানা বাড়ছে আবার কখনও টানা কমছে। উত্থান-পতনের এই প্রবণতায় চলতি বছর স্বর্ণের দাম সমন্বয় হয়েছে ৫৬ বার। যা দেশের ইতিহাসে যে কোনো বছরে সর্বোচ্চ।
প্রাচীনকাল থেকেই প্রাচুর্যের অপর নাম স্বর্ণ। একে বলা হয়, অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ। হাজার বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর চোখধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, দীপ্তি আর চাকচিক্য মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। হয়তো সে কারণেই এর মূল্য কখনও শূন্যে নামেনি; বরং দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে এর মূল্য।
দেশের স্বর্ণের বাজার মূলত বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে-কমলে এর প্রভাব পড়ে দেশের বাজারেও। ফলে দেশে সমন্বয় করা হয় দাম। সবশেষ গত ২৭ নভেম্বর দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। ৫৬ বার দাম সমন্বয়ের মধ্যে ৩২ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২৪ বার।
চলতি বছর স্বর্ণের বাজারে টানা উত্থান-পতন শুরু হয়েছিল দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দিয়েই। গত ১৭ জানুয়ারি ভরিতে ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪১ টাকা। অবশ্য এর পরদিনই ভরিতে কমানো হয় ১ হাজার ৭৫০ টাকা।এরপর গত ৬ মার্চ বৃদ্ধি ও ১৯ মার্চ হ্রাসের পর গত ৬ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৪ দফায় বাড়ানো হয় স্বর্ণের দাম। প্রতিবার বৃদ্ধিতেই ভাঙতে থাকে দামের রেকর্ড। তারপর গত ২০ এপ্রিল কমানো হয় স্বর্ণের দাম। তবে এই সমন্বয়ের ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের বাড়ানো হয়েছিল দাম।
তারপর হঠাৎই ধস নামে স্বর্ণের বাজারে। এপ্রিলে শেষ আট দিনে টানা ৭ দফায় কমানো হয় স্বর্ণের দাম। আর ২৩ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত টানা ৮ দফায় স্বর্ণের দাম কমায় বাজুস। সে সময় ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টা এমনকি ২৪ ঘণ্টায় কম সময়েও দাম সমন্বয়ের ঘটনা ঘটেছে।
টানা ৮ দফা পতনের পর মে মাসে ফের বাড়তে থাকে স্বর্ণের দাম। ৪ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত টানা ৬ দফায় বাড়ে দাম। তারপর ২৩ ও ২৫ মে এবং ৮ জুন টানা ৩ দফা কমানো হয় দাম। এরপর ১১ ও ২৫ জুন আবার দু-দফায় বাড়ে দাম।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষদিন অর্থাৎ ৩০ জুন ভরিতে ১ হাজার ৭৩ টাকা কমানো হয় স্বর্ণের দাম। তবে নতুন অর্থবছরে ফের ঊর্ধ্বমুখী স্বর্ণের বাজার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দাম সমন্বয় করা হয় গত ৭ জুলাই। সেদিন ভরিতে বাড়ানো হয় ১ হাজার ৬০৯ টাকা।এরপর গত ১৪ জুলাই এবং ১৮, ২০, ২২ ও ২৫ আগস্ট বাড়ানো হয় দাম। প্রতিবারই স্বর্ণের দাম গড়ে নতুন রেকর্ড। তবে ১ সেপ্টেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৬২১ টাকা কমানো হলেও গত ১৩, ২১, ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর টানা ৪ দফায় বাড়ে দাম। আর গত ২৮ সেপ্টেম্বর ফের কমানো হয় স্বর্ণের দাম।তারপর ১৯, ২২ ও ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৩ দফায় বাড়ে দাম। এরমধ্যে গত ৩০ অক্টোবর স্বর্ণ পৌঁছায় দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে। এদিন ভরি পৌঁছায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৬ টাকায়।
রেকর্ড গড়ার পর ফের পতনে পড়ে দেশের স্বর্ণের বাজার। ৪ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ৪ দফায় কমানো হয় দাম। ১৯ থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ৩ দফায় দাম বাড়ানোর পর গত ২৫ ও ২৬ নভেম্বর টানা দুই দফায় দাম কমায় বাজুস। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের বাড়ানো হয় দাম। গত ২৭ নভেম্বর ভরিতে ১ হাজার ১৫৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের ১ ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা।
সবশেষ গত ১ ডিসেম্বর দেশের বাজারে সমন্বয় করা হয়েছে স্বর্ণের দাম। সেদিন ভরিতে ১ হাজার ৪৮১ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২২৭ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ২৮৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ১৩৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।স্বর্ণের দামে ঘনঘন দাম পরিবর্তন কেন?
বাজুস বলছে, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে উত্থান-পতনের কারণেই দেশের বাজারে ঘনঘন দাম পরিবর্তন করতে হয়েছে। গত বছর ২৯ বার দাম সমন্বয় করলেও, এ বছর সেটি পৌঁছেছে ৫৬ বারে। অস্থিরতা চলতে থাকলে চলতি বছরের শেষ কয়েক দিনে আরও কয়েকবার দাম সমন্বয় হতে পারে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) বরাত দিয়ে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহসভাপতি মাসুদুর রহমান সম্প্রতি সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠানামা করে স্বর্ণের দাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও দাম সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে। আর চলতি বছর ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, মার্কিন নির্বাচন, ডলারের ও বিটকয়েনের দাম, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, গুজব ও ফেডের সুদহারসহ নানা কিছুর প্রভাবে স্বর্ণের বাজার অস্থির ছিল। যার ফলে দেশের বাজারে ৫৬ বার দাম সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়েছে।
ঘনঘন দাম পরিবর্তনের কারণে দেশের বাজারে স্বর্ণের ৬০ শতাংশ বেচাকেনা কমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, দামের অস্থির অবস্থার কারণে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা শঙ্কায় ছিলেন বছরজুড়ে। যার কারণে কমে গেছে বেচাকেনাও। বছর এখনও শেষ হয়নি। বাজার অস্থির থাকলে আরও বেশ কয়েকবার দাম সমন্বয় করার প্রয়োজন হতে পারে।
মাসভিত্তিক স্বর্ণের দাম সমন্বয় সম্ভব?
এ পরিস্থিতিতে ঘনঘন দাম সমন্বয় না করে মাসভিত্তিক দাম সমন্বয় করা যায় কি না, এমন প্রশ্নে মাসুদুর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে দাম স্থিতিশীল না হলে কখনোই দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম মাসব্যাপী এক রাখা সম্ভব নয়। তেল বা গ্যাস একটি নির্দিষ্ট দামে আমদানিকারকরা আমদানি করেন। যা দেশের বাজারে মাসব্যাপী বা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে স্বর্ণের বাজার সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কম-বেশি বিনিয়োগ করলেই দামে প্রভাব পড়ে।
২০২৫ সালে স্বর্ণের বাজার দর কেমন হবে?
ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন ডলার এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, অস্থিরতা চলমান থাকলে আগামী বছর স্বর্ণের দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। এতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে অস্থিরতা কমলে বাজার নিম্নমুখী হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Voice Protidin Desk
কমেন্ট বক্স